তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিশিক্ষা

ন্যানো টেকনোলজি কি ? এর ব্যবহার ও সুবিধা – অসুবিধা

সুপ্রিয় শিক্ষার্থি বন্ধুরা আজ আমরা শিখবো ন্যানো টেকনোলজি কি এবং এটি কি কাজে লাগে ও সেই সাথে এটির সমস্ত ব্যবহার এবং ইতিহাস। বর্তমানে যদি দেখা যায় তাহলে ধীরে ধীরে সমস্ত কিছুই ছোট থেকে ছোট হতেই চলেছে।

যেমন এখন আমরা যে সিম কার্ডটি ব্যবহার করি সেটি এক সময় অনেক বড় ছিল কিন্তু এটি ধীরে ধরে ছোট হতেই চলেছে। আর এই ছোট হওয়ার পেছনে কারণ হচ্ছে ব্যবহারিক সুবিধা।

এটি হচ্ছে সাধারণ একটি উদাহরণ, আপনি যদি আজকের এই আর্টিকেলটি একদম মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে আমি এটি বলবো যে ন্যানোটেকনোলজি নিয়ে যে সমস্ত বিষয় গুলো জানা দরকার সমস্ত কিছুই আপনি জানতে পাড়বেন।

তাই আমি মনে করি আপনার উচিৎ হবে ১০ মার্কের মধ্যে ১০ পেতে হলে এই বিষয়টি বা পেজটি প্রথম থেকে শেষ অব্দি ভালোভাবে পড়তে হবে। তাহলে চলুন ন্যানো টেকনোলোজি নিয়ে যত প্রশ্ন আছে তার সব উত্তর স্টেপ বাই স্টেপ জানা শুরু করি।

আর্টিকেল সূচনা

ন্যানো টেকনোলজি কি ?

ন্যানোপ্রযুক্তি বা ন্যানোটেকনোলোজিকে সংক্ষেপে ন্যানোটেকও বলা হয়। এটি হচ্ছে এমন এক মাধ্যম যা পদার্থকে আনবিক পর্যায়ে পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রন করতে পারে। তাই বলা হয় ন্যানোটেকনোলজি এমন এক প্রযুক্তি যা কম্পিউটার ব্যবহার করার মাধ্যমে পদার্থকে একদম খুদ্র বা আনবিক পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়।

এটি সাধারণভাবে এমন কাঠামো নিয়ে কাজ করে যা অন্তত একটি মাত্রায় ১০০ ন্যানোমিটার থেকেও ছোট। বিশেষ করে একটি নির্দিষ্ট পদার্থকে আনবিক পর্যায়ে যা অতি খুদ্র মাত্রায় নিয়ে আসাকেই ন্যানোটেকনলজি বলা হয়।

ন্যানো শব্দটি মূলত একটি গ্রিক ভাষার শব্দ যার আক্ষরিক অর্থ এসে দাড়ায় শুক্ষ বা ছোট আর আমরা যাকে খুদ্র ও বলে থাকি। এই ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করার মাধ্যমে অতি খুদ্র পদার্থ যা খালি চোখে দেখা যায়না সেটি নিয়েও বিশ্লেষণ করা যায়।

এই ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করার মাধ্যমে বিজ্ঞান ১০ মিটারের চেয়ে খুদ্র বস্তু বা কনা নিয়ে কাজ করতে সক্ষম হয়ছে। আর এই ন্যানোটেকনোলজি মূলত অনু ও পরমাণুর প্রকৌশল পদার্থ বিজ্ঞান ও জীব বিজ্ঞান এবং সেই সাথে রসায়ন বিজ্ঞানকে একত্রে ব্যবহার করে থাকে।

প্রতিনিয়ত প্রযুক্তি আপডেট হচ্ছে আর সেই সাথে ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করার মাধ্যমে দিন দিন বস্তু গুলোকে ছোট আরও ছোট করে দেয়া হচ্ছে। এর ফলে খরচ হয়ত একটু বেশী হচ্ছে কিন্তু অনেক বেশী সুবিধা ভোগ করতে পারছি।

যখন কম্পিউটার প্রথম আবিস্কার করা হয় তখন সেটির সাইজ ছিল ৫০ ফিট বা ১৫ মিটার লম্বা ছিল যা রাখতে একটি বড় মাপের রুমের দরকার হত কিন্তু এখন দেখুন সেটি ছোট হতে হতে এখন মানুষের পকেটে রেখে দেয়া যাচ্ছে।

আর এ সবই সম্ভব হয়েছে ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করার মাধ্যমে। এখনো এই প্রযুক্তির ব্যবহার তেমনভাবে শুরু হয়নি কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে আগামি বিশ্ব ন্যানো প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রযুক্তির উদ্ভাবন করবে।

ন্যানো টেকনোলজি কি সেটি নিয়ে আরও বিস্তারিত জানতে হলে আপনাকে ন্যানো বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক,

ন্যানো কি?

গ্রিক শব্দ Nanos থেকেই মূলত ন্যানো শব্দটির উৎপত্তি হয়ছে আর এই Nanos এর একটি অভিধানিক অর্থ রয়েছে সেটি হচ্ছে Dwarf যেটি দ্বারা ক্ষুদ্রাকৃতির জাদুকরি ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ হিসেবে বোঝানো হত।

ন্যানো মূলত একটি পরিমাপের একক যা দ্বারা একদম খুদ্র মাপের বস্তুর পরিমাপ করা হয়ে থাকে। পরিমাপের দিক দিয়ে বললে এটি হচ্ছে ১মিটারের ১০০ কোটি ভাগের ১ ভাগ আর এই ১ ভাগকেই মূলত ন্যানো বলা হয়ে থাকে। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন কত খুদ্র পরিমাপের বস্তু মাপতে এটি ব্যবহার হয়ে থাকে।

ন্যানোর উদাহরণ

যদি আপনাকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, এক ইঞ্চিতে কত ন্যানোমিটার হতে পারে? আপনি কি বলতে পাড়বেন? হয়তবা না বলবেন। তাহলে আমি বলে দেই, এক ইঞ্চিতে 25,400,000 ন্যানোমিটার রয়েছে।

একটি কাগজের পাতার পুরু মাপতে গেলে দেখা যায় এটি প্রায় 100,000 ন্যানোমিটার পুরু থাকে আর এই মাপটি হচ্ছে খবরের কাগজের পাতার মাপ এখন যদি বলেন কোন খবরের পাতার মাপ সেটি বলতে পারবোনা।

বিশেষ করে অনু পরমানু বিষয়ক যে সমস্ত বিষয় গুলো রয়েছে সেগুলো ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করেই পরিমাপ করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে যেগুলো খালি চোখে দেখতে পারা যায়না এবং হাতে ধরা যায়না সেগুলোর হিদাব করতে ন্যানোমিটার ব্যবহার হয়ে থাকে।

আরওঃ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি ও এটির সঠিক ব্যবহার সমর্পকে জানাতে ক্লিক করুন

ন্যানোটেকনোলজি বিস্তারিত আলোচনা

ন্যানো টেকনোলজি কি এর উত্তরে সংক্ষেপে বলা যায় ন্যানো হচ্ছে একটি মাপার একক। ১৭৯০ সালে ম্যাট্রিক একক এর শুরুটা হয়েছিলো ফ্রান্সে। ম্যাট্রিক পদ্ধতিতে দৈর্ঘ্যর ন্যানো একক মিটার এবং পৃথিবীর পরিধির ৪০,০০০,০০০ ভাগের এক ভাগকে ১ মিটার বলা হয়।

১৯৮৩ সালে ইটার এর সংজ্ঞা পুনরায় পরিবর্তিত করা হয়, বর্তমান সংজ্ঞা অনুযায়ী, বায়ুশুন্যে আলর গতির ২৯৯,৭৯২,৪৫৮ গাএর এক ভাগকে এক মিটার বলা হয়। এই মিতারের ১, ০০০, ০০০, ০০০ ( ১০০ কোটি ) ভাগের এক ভাগকে ন্যানোমিটার বলা হয়। এটি মাপের একেক হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

আর এই ন্যানোমিটার স্কেলে যে সমস্ত টেকনোলজি ব্যবহার বা এর সাথে যে প্রযুক্তি সম্পর্কিত সেগুলোকেই বলে ন্যানোটেকনলজি বা ন্যানোপ্রযুক্তি। সাধারণভাবে ন্যানোটেকনলজিতে কিছু বিষয় বিবেচনা করা হয় আর তা হল,

  • ন্যানোমিটার আকারের বস্তু নিয়ে গবেষণা
  • বিভিন্ন অনু-পরমানু নিয়ে গবেষণা ও নতুন বৈশিষ্টের বস্তু আবিস্কার করা
  • ন্যানমিতার আকারের যন্ত্র উদ্ভাবন করা।

ন্যানো টেকনোলজির পদ্ধতি

এটির মূলত দুটি পদ্ধতি রয়েছে একটি হচ্ছে নিচ থেকে উপরে ( Bottom to Up ) এবং অপরটি হচ্ছে উপর থেকে নিচে ( Top to Down ) আর এই পদ্ধতি ব্যবহার করেই মূলত পরমাপ গুলো করা হয়ে থাকে।

বিশেষ করে bottom-up পদ্ধতিতে নানান রকম উপকরন এবং বিভিন্ন ডিভাইসগুলো খুদ্র আকারের জিনিস ব্যবহার করে আনবিক নীতি অনুসরণ করে রাসায়নিক বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে একটু নতুন বস্তুতে রুপান্ত্র করা হয়ে থাকে। যদি বলা হয় তাহলে অনেক গুলো খুদ্র বস্তুকে একত্রে করার মাধ্যম এটি।

আর top-down পদ্ধতি ব্যবহার করার মাধ্যমে কোন প্রকার খুদ্র বস্তুর সাহায্য বা আনবিক পর্যায়ে না নিয়েই নতুন একটি বস্তুতে রূপান্তর করে ফেলা যায়। যদি এটি নিয়ে আলোচনা করা হয় তাহলে অনেক কিছু বলতে হবে। তাই আপাদত এই টুকুই জানিয়ে রাখার চেষ্টা করলাম।

একটি কথা না বললেই নয় কারণ বর্তমানে থাকে প্রতিটি ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্র গুলো top-down পদ্ধতি ব্যবহার করার মাধ্যমেই তৈরি করা হয়ে থাকে। তাই অনেকেই এই ন্যানোটেকনোলজিকে বোটম আপ প্রযুক্তি বলে থাকে।

ন্যানোটেকনোলজি কোন ধরনের প্রযুক্তি?

এটি হচ্ছে ন্যানোটেক প্রযুক্তি যাকে ন্যানো প্রযুক্তি বলা হয়। বিশেষ করে পদার্থকে আণবিক পর্যায়ে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র করে ব্যবহারের যোগ্য করে তোলাই হচ্ছে এই প্রযুক্তির প্রধান উদ্দেশ্য।

আশা করছি ন্যানো টেকনোলজি কি এবং এটি কোন ধরণের প্রযুক্তি সেটি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেয়ে গিয়েছেন। তাহলে চলুন পরবর্তি বিষয় জেনে নেয়া যাক,

ন্যানো টেকনোলজি জনক কে ?

ন্যানো টেকনোলজি কি জানার সাথে কে এটির জনক সেটি জানা অনেক বেশী জরুরী। স্যার রিচার্ড ফাইম্যান হচ্ছেন ন্যানোটেকনোলজির জনক। তিনি সর্বপ্রথম ১৯৫৯ সালে ন্যানোটেকনোলজির ধারণা দিয়েছিলেন আর তিনি ছিলেন একজন পদার্থবিদ।

রিচার্ড ফাইম্যান এটি বলেছিলেন ১৯৫৯ সালে দেয়া তার একটি আলোচনায় যাকে বলা হয়, There’s Plenty of Room at the Bottom যার বাংলা অর্থ দাড়ায় নীচে প্রচুর রুম আছে আর এর মানে হচ্ছে পদার্থের মধ্যে খুদ্র খুদ্র অনেক বস্তু আছে।

তার বক্তব্য থেকে স্পষ্টভাবেই উঠে আসে যে, পদার্থের মধ্যে থাকা খুদ্র খুদ্র বস্তু ব্যবহার করেই নতুন কিছুর আবিস্কার শুরু করা সম্ভব। আর তারই প্রতিফলন আজকের বিশ্বের ন্যানো টেকনোলজি।

আরওঃ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ১০ টি সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জানুন

ন্যানো টেকনোলজি কিভাবে আমাদের উপকারে আসে

এখন যদি বলা হয় এটি আমাদের কি কি উপকারে আসে তাহলে বলবো আপনার হাতে থাকা মোবাইলফোনটির দিকে খেয়াল করুন এটি কত ছোট মাপের করে তৈরি করা হয়েছে যে, আপনি চাইলেই হাতে ও পকেটে রেখে চলাচল ও ব্যবহার করতে পারেন।

বিশেষ করে এই সমস্ত ফোন গুলোর মধ্যে থাকা প্রতিতি পার্টস তৈরি করা হয়ছে ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করার মাধ্যমে। যদি তা না হত তাহলে আমরা আমাদের ফোন ও কম্পিউটারকে ব্যবহার করার জন্য অনেক বড় আলাদা ঘর তৈরি করে নিতে হত।

বিশেষ করে বস্তুকে অধিক থেকে অধিক ছোট করার কারণে ব্যবহার করা থেকে শুরু করে বহন সমস্ত যায়গায় সুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের ব্যবহার করা কম্পিউটার বা মোবাইলে প্রসেসর থাকে সেটি কিন্তু আমরা কম হোক বা বেশী প্রায় সবাই জানি।

এই প্রসেসর কে ন্যানোটেকনোলজি নামক এমন খুদ্র প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে যে এটি একটি খুদ্র যন্ত্রে পরিনত হয়েছে। আমি মোবাইল এবং কম্পিউটার দিয়েই উদাহরণ দিচ্ছি কারণ এটি আমরা সবাই ব্যবহার করি ও বস্তু গুলো সম্পর্কে জানি।

বলছিলাম প্রসেসরের কথা, এর মধ্যে যে ম্যাটেরিয়াল গুলো ব্যবহার করা হয়েছে সেটি প্রথম যখন তৈরি করা হয়েছিল তখন অনেক বড় ছিল রাখতে প্রায় একটি বড় সর রুমের মত জায়গা লাগতো।

কিন্তু ধীরে ধীরে ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করার মাধ্যমে এটিকে এত বেশী খুদ্র করে তৈরি করা হয়েছে যে আগের তুলনায় অনেক বেশী কার্যকরী হয়ে উঠেছে। আর এটি প্রতিনিয়ত ছোট হতেই থাকবে এবং আর বেশী উন্নত হবে।

যদি বলা হয় তাহলে বলতে পারি, এই ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করার মাধ্যমে আমাদের জীবন যাত্রা অনেক বেশী সহজ করে তুলেছে। ধারণা করা হচ্ছে আগামি বিশ্ব এমনভাবে গড়ে উঠতে যাচ্ছে যে আমরা যে ঘরে থাকবো সেই ঘরেও ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করা হবে আর এর ফলে ইন্টারনেট থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ সমস্ত কিছু ঘরের ম্যাটেরিয়াল থেকেই পাওয়া যাবে।

ন্যানোটেকনোলজির ব্যবহার

আশা করছি আপনি ন্যানোটেকনোলজি সম্পর্কে সস্ত কিছুই জেনে গিয়েছেন তাহলে এখন ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার সমর্পকে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক তাহলে ন্যানো টেকনোলজি কিভাবে আমাদের উপকারে আসে এবং কি কি উপকার করে সমস্ত বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে।

খাদ্য শিল্পে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার

বর্তমান বিশ্বে খাদ্য দ্রব্য জাতীয় যা কিছু আছে সমস্ত কিছু নিরাপদে রাখতে ন্যানটেকনলজি অনেক অংশে ব্যবহার হয়ে আসছে। যেমন খাদ্যজাত দ্রব্য প্যাকেজিং থেকে শুরু করে এর সিলভার তৈরির কাজে, এমনকি খাদ্যে স্বাদ তৈরি করতে বিভিন্ন ধরণের ন্যানোমেটেরিয়াল তৈরির ক্ষেত্রে।

তাছাড়াও উন্নত বিশ্বে খাদ্য নিরাপদে রাখার জন্য কিছু যন্ত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে যা মূলত ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করেই তৈরি করা হয়ে থাকে।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে ন্যানটেকনলজির ব্যবহার

বলুনতো, ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্য ক্যান্সারের কোষটিকে প্রথমেই খুজে বের করেই ধ্বংস করে ফেলা যেত ও সেই সাথে দেহের মধ্যে থাকা ক্ষুদ্র রোগ জীবাণু গুলো অতি সহজেই খুজে বের করে সেটিকে ধ্বংস করতে সময় লাগতো মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই।

এমন হলে হয়ত আমরা অতি সহজেই যেকোনো রোগ ব্যাধি থেকে অতি সহজেই বেঁচে যেতে পারতাম। সত্যই এমন ঘটনা ঘটতে চলেছে খুব তাড়াতাড়ি কারণ ন্যানোটেকনলজি ব্যবহার করার মাধ্যমে দেহের মধ্যে থাকা ক্ষুদ্র জীবাণু গুলোকে অতি সহজেই খুজে বের করে সেটিকে ধ্বংস করে ফেলা যাবে।

আমাদের শরিরে রোগ ব্যাধির সৃষ্টি হয় মূলত অনু-পরমানু গুলো ঠিক মত কাজ না করলেই। আর যদি এটি ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করে সঠিকভাবে কাজ করানো যায় তাহলে সমস্ত রোগ ব্যাধি থেকে আমরা মুক্ত থাকতে পারবো।

বিশেষ করে ঔষধ তৈরির আণবিক গঠনে যাতে রোগাক্রান্ত সেলে বা কোষে সরাসরি ঔষধ প্রয়োগ করা যায় ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করার মাধ্যমে। আর ফলে বর্তমানেই ক্যান্সারের মত রোগ নিরাময় করা যাচ্ছে।

বিশেষ করে আমরা সবাই ক্যামোথেরাপির সাথেই কম বেশী সবাই পরিচিত। আর এটি হচ্ছে ন্যানটেকনলজির একটি অবদান ছাড়া কিছুই নয়।

রাসায়নিক শিল্পে ন্যানটেকনলজির ব্যবহার

সানস্ক্রিন এ ব্যবহার করার জন্য টিটানিয়াম ডাই-অক্সাইড তৈরির কাজে ও বিভিন্ন জিনিসের প্রলেপ তৈরি করার কাজে এটির ব্যবহার হয়ে থাকে।

বিশেষ করে পানি পরিষ্কার ও বিশুদ্ধকরণ করার জন্য ন্যানটেকনলজির অনেক বেশী ব্যবহার হয়ে থাকে। তাছাড়াও যে কাজ হাতের মাধ্যমে করা সম্ভব নয় বা চোখে দেখে করা সম্ভব নয় সেগুলো করার খেত্রেও এটির অনেক বেশী ব্যবহার হয়ে থাকে।

ইলেট্রনিক্স শিল্পে ন্যানোটেকনোলজির ব্যবহার

বিশেষ করে ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি গুলো বড় থেকে ছোট আকারে নিয়ে আসা ও ব্যবহার সুবিধার জন্য ন্যানোটেকনলজির ব্যবহার হয়। যেমন আগেই বলেছি এক সময় যে কম্পিউটার রাখতে বড় একটি রুমের দরকার হত কিন্তু এখন সেটি পকেটে রেখেই ব্যবহার করা যাচ্ছে।

তাছাড়াও ইলেট্রনিক্স যন্ত্রপাতিতে বিদ্যুৎ খরচ থেকে শুরু করে ওজন ও আকৃতি কমিয়ে নিয়ে এসে এর কাজের ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এটির ব্যবহার হয়ে থাকে।

জ্বালানি তৈরিতে ন্যানোটেকনলজির ব্যবহার

কম খরচ করে অতি সহজেই জ্বালানি তৈরি করার কাজে এটির ব্যবহার হয়ে থাকে। তাছাড়াও হাইড্রোজেন আয়ন এর জন্য ফুয়েল সেল তৈরি করার কাজেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

ব্যাটারি শিল্পে সৌরকোষ তৈরিতে ন্যানোটেকনলজির ব্যবহার

প্রচলিত সৌরকোষের চাইতে আর বেশী সাশ্রয়ী মুল্যের ন্যানটেক সৌরকোষ তৈরি করার কাজে ও বিভিন্ন ধরণের ব্যাটারি তৈরির কাজে এটি ব্যবহার হয়ে থাকে। বিশেষ করে লিথিয়াম পলিমারের ব্যাটারি গুলোতে ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার হয়ে থাকে।

তাছাড়াও পানিতে চলে এমন ব্যাটারি তৈরি ক্ষেত্রে যে পানির সেল থাকে সেগুলো তৈরি করতে ন্যানোটেকনলজির অনেক বেশী ব্যবহার হয়ে থাকে।

খেলা ধুলা ও সরঞ্জাম তৈরিতে ন্যানোটেকনোলজি

বিশেষ করে টেনিস বলের স্থায়িত্ব বৃদ্ধির জন্য ও বাতাসের সাথে গলফ বলের গতি ও দিক ঠিক রাখার জন্য ন্যানোটেকনোলজির অনেক বেশী ব্যবহার হয়ে থাকে তাই এই খেলে গুলো সব সময় ব্যয়বহুল হয়ে থাকে।

কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার তৈরির কাজে ন্যানোটেকনোলজি

ভিডিও গেমস কনসল থেকে শুরু করে পার্সোনাল কম্পিউটারের মেমোরি বিশেষ করে হার্ডড্রাইভ ও প্রসেসর তৈরির কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। শুধু তাই নয় এটি ব্যবহার করার মাধ্যমে হার্ডওয়্যার গুলোকে অনেক ছোট মাপের করা যায়।

সেই সাথে গতি বৃদ্ধি থেকে শুরু করে দক্ষতা বাড়িয়ে তোলার জন্য হার্ডওয়্যারে বিভিন্ন ধরণের ন্যানো চিপ ব্যবহার হয়ে থাকে।

কম্পিউটার ও মোবাইলের প্রসেসর তৈরিতে ন্যানোটেকনোলজির ব্যবহার

কম্পিউটারের ও মোবাইলের প্রসেসর তৈরি করার জন্য ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর এটি ব্যবহার করার ফলে এর আকৃতি থেকে শুরু করে কাজের গতি ও দক্ষতা অনেক অংশে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।

কৃত্তিম অঙ্গ-পতঙ্গ তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজি

বর্তমানে খেয়াল করা যাচ্ছে মানুষের শরিরের যেকোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি করা হচ্ছে এবং সেটি সঠিকভাবেই শরিরের মধ্যে প্রতিস্থাপন করা যাচ্ছে। আর এটি সহজ হয়েছে মূলত ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করার মাধ্যমেই।

বাতাস পরিশোধনে ন্যানো টেকনোলজি

বিশেষ করে শিল্প কারখানা থেকে নির্গত ক্ষতিকর গ্যাসকে ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করার মাধ্যমে পরিশোধন করা যাচ্ছে ও অনেক ক্ষতি থেকে বাঁচার পাশাপাশি সেই সমস্ত গ্যাস মানুষের উপকারের জন্য ব্যবহার করা যাচ্ছে।

তাছাড়াও বিভিন্ন ধরণের বিলাস বহুল গাড়ি থেকে শুরু করে ওভেন ইত্যাদি তৈরির কাজে ন্যানোটেকনোলজির ব্যবহার করে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা হয়ে থাকে। এমনকি ন্যানোটেকনলজির ভিত্তিতে অনেক নতুন নতুন টেকনোলজির উদ্ভব হচ্ছে।

নতুন নতুন দ্রব্যের সূচনা করছে এবং সেই সাথে ব্যবসায়িক সুযোগের দ্বার উন্মোচন করা হচ্ছে।

আরওঃ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি ও আমাদের কি কি কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে?

ন্যানো টেকনোলজির সুবিধা

  • ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করে তৈরি করা প্রতিটি পন্য অনেক বেশী মজবুত ও টেকসই হয়ে থাকে।
  • ক্যান্সারের মত দুরারোগ্য রোগ ব্যাধি গুলো অতি সহজেই নিরাময় করা যাচ্ছে।
  • খাদ্য-জাত দ্রব্য গুলো অনেক দিন যাবৎ টিকিয়ে রাখার জন্য প্যাকেজিং এর জন্য সিলভার তৈরি কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে।
  • কম্পিউটারে ব্যবহার হওয়া প্রসেসর তৈরি করা যাচ্ছে এবং ইচ্ছা অনুযায়ী গতি বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
  • সৌর চালিত ব্যাটারি থেকে শুরু করে সমস্ত পানির ব্যাটারি গুলোর সেল তৈরি কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে এতে চার্জ অনেক সময় যাবৎ টিকে থাকে।
  • ঔষধ তৈরি কাজে ক্ষুদ্র প্রযুক্তি হিসাবে ন্যানোটেকনলজির ব্যবহার হয়ে থাকে।
  • বিশেষ করে আমাদের অধিক ব্যবহার করা ইন্টারনেটের ফাইবার ক্যাবল তৈরি করার সময় ন্যানো প্রযুক্তির ব্যবহার হয়ে থাকে।
  • আমাদের ব্যবহার করা প্রতিটি ইলেক্ট্রনিক্স পন্য ব্যবহার করার সময় অনেক অংশে বিদ্যুৎ খরচ কমিয়ে নিয়ে আসছে।
  • আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দ্বারা তৈরি রোবটের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরি করার ক্ষেত্রে এটির অনেক ব্যবহার হয়ে থাকে।
  • Nanotechnology ব্যবহার করার ফলে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার তৈরি করা যায়।
  • Nanotechnology দ্বারা তৈরিকৃত প্রতিটি পন্য অনেক মজবুজ ও সাশ্রয়ী হয়ে থাকে।
  • Nano technology ব্যবহার করার মাধ্যমে মহাকাশের যন্ত্র তৈরি করা হয়ে থাকে।
  • মানুষের কৃত্তিম অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তৈরি করা যায় ও সঠিকভাবে প্রতিস্থপন করা যায়।

এরমন আর অনেক সুবিধা রয়েছে এবং সামনে আরও বেশী সুবিধা আসবে যে বিষয় গুলো এখনো মানুষের কল্পনার বাইরে আছে।

ন্যানো টেকনোলজির অসুবিধা

এটি এমন একটি প্রযুক্তি যা আমাদের জীবন যাত্রাকে অনেক বেশী সহজ করে তুলেছে তাই এর তেমন বেশী অসুবিধা নেই বললেই চলে। ন্যানো প্রযুক্তির সুবিধা অনেক কিন্ত অসুবিধা নেই বললেই চলে।

তারপরেও কিছু অসুবিধা থাকতে পারে এটাই স্বাভাবিক। তাহলে চলুন অসুবিধা গুলো জেনে নেয়া যাক,

  • যেহেতু এটি একটি আধুনিক প্রযুক্তি তাই অনেক বেশী ব্যয় বহুল।
  • এগুলো মানুষের শরিরের জন্য অনেক বেশী ক্ষতিকর হয়ে থাকে তাই যন্ত্র-পাতি গুলো দূরে রেখে ব্যবহার করাই ভালো।
  • এই প্রযুক্তি ব্যবহার করার জন্য স্থির বিদ্যুৎ দরকার হয় না হলে যন্ত্র গুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটতে পারে।
  • এই প্রযুক্তির জন্য তামার তৈরি বস্তু দিয়েই সার্কিটের কাজ করা হয় নতুবা অধিক গরমে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

এই সমস্ত অসুবিধা ছাড়া তেমন কিছু আমার চোখে পরেনা। আর যদি আপনার এটির অসুবিধা সম্পর্কে জানা থাকে অবশ্যই কমেন্টে জানিয়ে দিবেন যেন আপনার কমেন্টি আমি পোস্টে যুক্ত করে দিতে পারি।

আরওঃ জুগের সবচেয়ে ভয়ংকর ৫টি কম্পিউটার ভাইরাস

FAQ

ন্যানো টেকনোলজি কি?

পদার্থকে আণবিক পর্যায়ে পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রন করার যে মাধ্যম রয়েছে সেটিকেই ন্যানো প্রযুক্তি বলা হয়। ন্যানো প্রযুক্তির সঠিক সংজ্ঞা দিলে দাঁড়ায় যে, ন্যানো টেকনোলজির সমস্ত যন্ত্রকে সঠিকভাবে ব্যবহার ও প্রয়োগ করাকে বোঝায়।

এটি এমন এক প্রযুক্তি যা পদার্থকে ক্ষুদ্র থেকে অতি ক্ষুদ্র পরিমাপে ব্যবহার হয়ে থাকে। ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন সব বস্তু তৈরি করা হয়ে থাকে যা একটি সাধারণ যন্ত্র বা প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা সম্ভব না।

ন্যানো টেকনোলজি কোথায় ব্যবহার করা হয়?

খাদ্য শিল্পে, চিকিৎসা ক্ষেত্রে, ক্যান্সার নিরাময়ে, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার তৈরিতে, খাদ্র দ্রব্যের গুনাগুন ঠিক রাখতে বক্স তৈরি করার ক্ষেত্রে, খেলা ধুলা ও সরঞ্জাম তৈরিতে, কম্পিউটার ও মোবাইলের প্রসেসর তৈরিতে, বাতাস পরিশোধনে, কৃত্তিম অঙ্গ-পতঙ্গ তৈরিতে, ব্যাটারি শিল্পে সৌরকোষ তৈরিতে, জ্বালানি তৈরিতে, রাসায়নিক শিল্পে, ইলেট্রনিক্স শিল্পে ইত্যাদি ক্ষেত্রে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার হয়ে থাকে।

ন্যানোটেকনোলজি এর জনক কে?


১৯৫৯ সালে ন্যানোটেকনোলজির প্রথম ধারণা দেন রিচার্ড ফাইম্যান আর তখন থেকে তাকেই ন্যানোটেকনলজির জনক বলা হয়। আর তিনি ছিলেন একজন পদার্থবিদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *