তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিব্লগ পোস্ট

৫টি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম যেগুলো সবচেয়ে ভয়ঙ্কর

৫টি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম -আমাদের মধ্যে প্রায় সবাই কম্পিউটার ব্যবহার করুক বা না করুক তারা কিন্তু কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কে খুব ভালোভাবেই জানে।  এটাও জানে যে বিশ্বের সমস্ত কম্পিউটার ভাইরাস তৈরি হয়েছে সমস্ত ভাইরাসগুলো শুধুমাত্র মানুষের ক্ষতি করার জন্যই তৈরি করা হয়েছে।

সমস্ত কম্পিউটার ভাইরাস গুলোর মধ্যে কিছু রয়েছে যেগুলো শুধুমাত্র তথ্য চুরি করে নিয়ে মানুষকে হয়রানি করে ও ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নেয় এবং এমন কিছু কম্পিউটার ভাইরাস রয়েছে যেগুলো মাধ্যমে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার সমস্ত কিছু একেবারে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

আবার এমনও কম্পিউটার ভাইরাস রয়েছে যা একটি কম্পিউটার কে একদম জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিতে পারে এক কথায় বলতে গেলে কিছু কিছু ভাইরাস হয়েছে যেগুলো একদম জলজ্যান্ত কম্পিউটারকে বোম্ব বানিয়ে তুলতে পারে।

আপনি যদি একটু টেকি হয়ে থাকেন এবং কম্পিউটার সম্পর্কিত বিষয় একটু জানার আগ্রহ থাকে তাহলে আপনি ভাইরাস সম্পর্কে একটু হলেও জেনেছেন এবং আপনি হয়তো দেখে থাকছেন হ্যাকিং রিলেটেড বিভিন্ন ধরনের মুভি গুলোতে কিভাবে হ্যাকিং মাধ্যমে ব্যবহার করে ভাইরাস দ্বারা অ্যাটাক করে মানুষের তথ্য হাতিয়ে নেয়া হয়।

আর যদি না দেখে থাকেন তাহলে আপনি ড্রাইহার্ড সিরিজের  ভিডিও গুলো দেখতে পারেন আর মুভি গুলো দেখলে আপনি হ্যাকিং সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে নিতে পারবেন।

তাহলে চলুন আজকের মূল বিষয় কয়েকটি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম এবং সেইসাথে ভাইরাসগুলোর ক্ষতিকর দিক ও ইতিহাস এবং ভাইরাস থেকে কিভাবে আপনি আপনার কম্পিউটারকে রক্ষা করতে পারবেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত বেসিক ধারণা নিয়ে নেয়া যাক।

৫টি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম ও ইতিহাস

আমি চেষ্টা করব সবচেয়ে মারাত্মক কম্পিউটার ভাইরাস গুলোর নাম তুলে ধরতে এবং সেইসাথে সমস্ত ভাইরাসগুলো কি কি ক্ষতি করে থাকে ও এর ইতিহাস সম্পর্কে সমস্ত তথ্য তুলে ধরার জন্য।

 তাহলে চলুন ৫টি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম ও ইতিহাস শুরু করি,

কোড রেড

কোড রেড নামক কম্পিউটার এই ভাইরাসটির প্রথম আগমন ঘটে ২০০১ সালে এটি উইন্ডোজ এবং উইন্ডোজ চালিত যে সমস্ত ডিভাইসগুলো বা কম্পিউটার গুলো ছিল সেই সমস্ত কম্পিউটারে খুব সহজেই দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রবেশ করতে পেরেছিল।

এই ভাইরাসটি এতো মারাত্মক ভাবে বিস্তার লাভ করেছিল যে হোয়াইট হাউজের ওয়েব সাইট সহ বেশ কিছু ওয়েবসাইট একদম অকেজো করে ফেলে এবং সেইসাথে কিছু কম্পিউটারকে একদম অকেজো করে ফেলে।

 এই ভাইরাসটি মূলত ইন্টারনেট মাধ্যম ব্যবহার করেছিল যার কারণে এই ভাইরাসটি নিজে থেকেই আইপি অ্যাড্রেস ট্রেকিং করতে পারতো এবং ১০০ আইপি অ্যাড্রেস একসঙ্গে ট্রাকিং করত আর এই ১০০ আইপি অ্যাড্রেসের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ থাকা কম্পিউটার গুলোতে অতি সহজে প্রবেশ করতে পারত।

এই ভাইরাসসটি ২০০১ সালের মধ্যেই প্রায় ১৬০ কোটি ডলারের অনেক বড় ক্ষতি করে বসে।

আই লাভ ইউ -I love you

ভালোবাসি কথাটি কম বেশী সবাই শুনতে অনেক বেশী আগ্রহি হয়ে থাকে আর সেটি যদি হয় মেসেজ বা ইমেইলের মাধ্যমে তাহলে আমারা কম বেশী সবাই ওপেন করে দেখবো কি এমন রয়েছে যে ভালোবাসার কথা বলছে।

বিশেষ করে এমন কিছু নাম দিয়ে ভাইরাস গুলোকে মানুষের কাছে ইমেইল করা হত সেই নাম বা টাইটেল দেখেই অনেকেই মেইল ওপেন করতো এবং তারপর মেইলের মধ্যে থাকতো একটি এটাচমেন্ট সেই এটাচমেন্ট কে লাভ লেটার ভেবে অনেকেই ডাউনলোড করেছিলো আর তখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল এই ভাইরাসের অত্যাচার।

বিশেষ করে ইমেইলের সাথে যে অ্যাটাচমেন্ট টা দেওয়া হতো বা সেন্ড করা হতো সেই অ্যাটাচমেন্ট-এর নাম এমন একটি নাম দেয়া হতো যেটি মানুষ ক্লিক করে ওপেন করার মত একটি উৎসাহ পেয়ে যেত আর এই নামটি হল LOVE-LETTER-FOR-YOU.TXT.vbs

এমন ফাইল নেম দেখার পর কেউ যদি এই নামের উপরে ক্লিক করত এবং সেটিকে ডাউনলোড করতো এবং কম্পিউটারে সেভ হওয়ার সাথে সাথে তার যে রোমান্টিকতার মনোভাব ছিল সেটির বারোটা বাজিয়ে দিতো।

তথ্যসূত্র জানানো হয় এই ভাইরাসটি বানানো হয়েছিল ফিলিপাইন থেকে এবং সেটি ঘটেছিল ২০০০ সালের ৫ মে এবং এই ইন্টারনেটে আক্রমণ শুরু করার পর থেকে প্রায় লক্ষাধিক কম্পিউটারকে তারা আক্রমণ করতে সক্ষম হয়েছিল।

এই ভাইরাসটি যখন প্রাথমিকভাবে যাত্রা শুরু করে তখন মূলত এটি প্রথম ধাপ ছিল ইমেইলের মাধ্যমে মানুষের কাছে ছড়িয়ে দেয়া কিন্তু পরবর্তীতে ভাইরাসটি যখন ইমেইলের মাধ্যমে মানুষের কম্পিউটার সেটআপ হয়ে যায় সেই কম্পিউটারের যে সমস্ত পেনড্রাইভ বা মেমোরি কার্ড প্রবেশ করানো হতো সেসব মেমোরি কার্ডের মাধ্যমে খুব সহজেই এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে স্থানান্তরিত হতে পারত।

এভাবে ধীরে ধীরে এই ভাইরাসটি এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে খুব সহজেই প্রবেশ করে এবং অনেক মানুষের ক্ষতি করে ফেলে।

কম্পিউটার ভাইরাস কে তৈরি করেছিল সে বিষয় নিয়ে তখনকার সময়ে মানুষের সঠিক ধারণাটি সেটি ছিল না কারণ তখন সে ভাইরাসটি নির্মাতা এমনভাবে ভাইরাসটিকে প্রচার করেছিল তাকে মানুষ যতই খোঁজ করুক না কেন সে এমনভাবে নিজেকে গোপন করে রেখেছিল যে কোনভাবে তাকে ইন্টারনেট বা কোন মাধ্যম থেকে খোঁজ করা সম্ভব হয়নি।

কারো কারো ধারণা রয়েছে যে ওনার দে গজম্যান নামের এক ব্যক্তি মূলত এই ভাইরাসটি তৈরি করে এবং এই ভাইরাসটি তৈরি করে এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে খুব সহজেই ছড়িয়ে দেয়।

তার নামটি গণমাধ্যমে উঠে আসার পর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছিল কিন্তু পরবর্তীতে তার দোষের উপরে যথেষ্ট কোন প্রমাণাদি না থাকার কারণে কোর্ট থাকে মঞ্জুর করে দেয় এবং সেইসাথে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করা হয় যে এই ভাইরাসটি পুরো বিশ্বে প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করে ফেলেছে।

সেইসময়কার অনেক বড় ক্ষতি ধরা হতো কারণ দুই হাজার সালে ১০ মিলিয়ন ডলার মানে অনেক টাকার ব্যাপার ছিল এজন্যই এ ভাইরাসটিকে অনেক মারাত্মক ভাইরাস বলেও আখ্যায়িত করা হয়।

নিমডা

বিশেষ করে ২০০১ সাল চলাকালীন সময় কে কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্তের আক্রমণের স্বর্ণালী সময় ধরা হয় কারণ এই সময়ে বিশ্বের যে পরিমাণ কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল বা সংক্রমিত হয়েছিল এমন ঘটনা এর আগে বা এর পরবর্তী সময়ে ঘটেনি।

বিশেষ করে ৫টি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম গুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে অধিক তাড়াতাড়ি পরিচিতি লাভ করেছিলো এবং ছড়িয়ে পড়েছিলো।

সেইসময় ২০০১ সালে এই নিমডাভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে এবং সেই সময় এই ভাইরাসটি এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে এত দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়েছিল যে তখন অন্যান্য যে সমস্ত ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল তাদের প্রসারের চেয়ে নিমডা অধিক বেশী প্রসার ঘটিয়েছিলো।

যার ফলে অন্যান্য সমস্ত ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার যে রেকর্ড ছিল সেটি ভেঙ্গে ফেলেছিলো তাও সময় নিয়েছিল মাত্র ২২ মিনিট এই মাত্র ২২ মিনিটের মধ্যে অন্যান্য ভাইরাস কে পিছে ফেলে খুব তাড়াতাড়ি এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল।

বিশেষ করে এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার প্রথম যে কারণগুলো ছিল তার মধ্যে হচ্ছে সার্ভার অ্যাটাক এর মানে হচ্ছে তখন তারা সরাসরি যে সমস্ত ইন্টারনেট সার্ভার গুলোকে লক্ষ্য করে ভাইরাসগুলোকে ছড়ানো শুরু করা অর্থাৎ সরাসরি তার মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ভাইরাসগুলোকে ছরিয়ে দেয়।

কিছু সময়ের বা কিছুক্ষণের ভেতরে এটি বিভিন্ন উপায়ে ইন্টারনেট মাধ্যমকে ব্যবহার করে এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে অতি তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়েছিল এমনকি এই ভাইরাসটি ইমেইল ব্যবহার করার মাধ্যমে একজন থেকে অন্যজনের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে ছিল সেটি ছিল খুবই ইজি একটা ব্যাপার।

এই ভাইরাসটি যখন একটি কম্পিউটারে প্রবেশ করে তখন সেই কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম রয়েছে সেটিকে নিজের আয়ত্বে নিয়ে নেয় আর এই নিজের আয়ত্বে নিয়ে নেওয়ার জন্য অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে এমন একটি জায়গা তৈরি করে এটিকে বলা হয় চোরাই দরজা।

মানে হচ্ছে কম্পিউটারে অপারেটিং সিস্টেমের দুর্বল পয়েন্ট গুলো ছিল সেগুলো এবং সে অনুযায়ী তাদের ভাইরাসের মাধ্যমে সেই কম্পিউটারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে নিত।

বিশেষ করে ওই সময় যে ভাইরাসটি আক্রমণ করে ওই ভাইরাসের যে মূলহোতা বা হ্যাকার সে খুব সহজেই যে সমস্ত কম্পিউটার আক্রান্ত হয়েছিল সেগুলোর সমস্ত তথ্য চুরি করে নেয় এবং সেগুলো নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী ব্রাউজ করা শুরু করে।

যখন ওই সংক্রমিত কম্পিউটারের ব্যবহারকারী অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মোডে থাকতেন তখন সেই কম্পিউটারের পুরো যে এক্সেস সেটিং সেটি নিজের হাতে নিয়ে নিত।

হ্যাকার সমস্ত কিছু নিজের হাতে নিয়ে নেওয়ার পর সেই কম্পিউটারের মালিককে বিভিন্নভাবে ব্ল্যাকমেইল করত অথবা তার তথ্যগুলো চুরি করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বিক্রি করে প্রচুর পরিমাণে টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল।

মাইডুম

এই ভাইরাসটির প্রথম পাদুর্ভাব ঘটে ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আর এই ভাইরাসটি মূলত ডস অ্যাটাক এর জন্য ব্যবহার করা হতো।

এই ভাইরাসটি নিমডা এবং গোল্ড রেট টু এর মত একই আচরণ করত কারন কম্পিউটারে প্রবেশ করার সাথে সাথে সেই কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমের দুর্বল পয়েন্ট ছিল সে গুলোকে গ্রাফ করে নিত এবং সে দুর্বল পয়েন্ট থেকে কম্পিউটারের একটি চোরাই দরজা খুলে দেয় আর সেই চোরাই দরজার মাধ্যমে খুব সহজেই কম্পিউটার এক্সেস নিয়ে নেয় সেই ভাইরাস এর মূল হোতা।

কিন্তু এই ভাইরাসটি বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি যার কারণে ওই একই বছরে মাইডুম এর দ্বিতীয় সংস্করণ সার্চ ইঞ্জিনগুলো কে খুব তাড়াতাড়ি গ্রাফ করে এবং সে গুলোকে অ্যাটাক করা শুরু করে যার ফলে সার্চ ইঞ্জিনগুলোর জন্য অনেক বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে।

মাইডুম ভাইরাসের দ্বিতীয় সংস্করণের মূল লক্ষ্য ছিল সার্চ ইঞ্জিনগুলো। কারণ তখন সার্চ ইঞ্জিন গুলোতে এমন ভাবে এটাক করা হয় যার ফলে কিছু কিছু সার্চ ইঞ্জিন একদম শেষ করে বসে।

এই ভাইরাসটি যে সমস্ত কম্পিউটারকে সংক্রমিত করত সে সমস্ত কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগ থাকত এবং সে কম্পিউটার থেকে গোপনে ইন্টারনেট ব্রাউজার ব্যবহার করার মাধ্যমে গুগলের সার্চ ইঞ্জিনে বা অন্যান্য যে সমস্ত সার্চ ইঞ্জিন ছিল সেই সময়ে সমস্ত সার্চ ইঞ্জিন গুলোতে লক্ষ লক্ষ সার্চ রেজাল্ট সেকন্ডের মধ্যে পাঠানো হত।

আর এর ফলে সে সময়ে যে সমস্ত সার্চ ইঞ্জিনগুলো ছিল সেগুলো অনেক বেশি ধীরগতিতে হয়ে যায় এবং কিছু কিছু সার্চ ইঞ্জিনের সার্ভার এত বেশি ধীরগতি হয় এবং এত বেশি ইউজার প্রবেশ করে যার ফলে সার্ভারগুলো একদম ক্রাশ করে বসে।

তখনকার সময়ে ১২টি ইমেইল চেক করলে একটি করে ইমেইলে এই ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যেত। এর মানে হচ্ছে তখন যদি ১০০ ইমেইল ওপেন করা হতো তার মধ্যে মোট দশটি ইমেইলের মধ্যে এই ভাইরাসটি পাওয়া যেত।

ক্রিপ্টোলকার -Cripto Locker

৫টি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম গুলোর মধ্যে এটি অনেক বেশী মারাত্মক কারণ এটি টাকা রিলেটেড একটি নাম। সেই সময়ের যে সমস্ত মারাত্মক ভাইরাস গুলো ছিল সমস্ত ভাইরাসের মধ্যে অধিক মারাত্মক যে ভাইরাসটির নাম বলা যায় সেটা হচ্ছে ক্রিপ্টোলকার।

এই ভাইরাসটির প্রথম আগমন ঘটে ২০১৩ সালে বিশেষ করে ইমেইলের সাথে থাকা অ্যাটাচমেন্ট-এর সাথে এই ভাইরাস চারিদিকে ছড়িয়ে দেয়া হয়।

এই ভাইরাসটি হচ্ছে এক ধরনের রানসমওয়্যার। আর যারা মূলত ভাইরাস সম্পর্কে একটু ধারনা রাখেন তারা হয়তো রানসমওয়্যার শব্দটির সাথে অনেক বেশি পরিচিত।

সমস্ত ভাইরাস গুলোর মধ্যে বিশেষ করে র‍্যানসমওয়্যার গুলো অনেক বেশী মারাত্মক হয়ে থাকে।

আর এই রানসমওয়ার ভাইরাস গুলো এমন ভাবে তৈরি করা হতো সে একটি কম্পিউটারে প্রবেশ করার পর সেই কম্পিউটারের মালিককে কোন ভাবেই তার কম্পিউটারে থাকা ফাইলকে ওপেন করতে দিত না বা অ্যাক্সেস করতে বাধা প্রদান করতো।

কারণ এই ভাইরাস কম্পিউটারে প্রবেশ করার সাথে সাথে অপারেটিং সিস্টেমের ঢুকে পড়ে এবং অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে যাওয়ার পর ফাইলগুলোকে সম্পূর্ণ ব্লক করে দেয়।

এই ভাইরাসটি সংক্রমণের একটি লক্ষণ ছিল সেটা হচ্ছে মানুষ কোন প্রকার ফাইল অ্যাক্সেস করতে পারত না আর তখন বুঝেনিতো তার কম্পিউটারে ভাইরাসের সংক্রমন ঘটেছে।

বিশেষ করে এই ভাইরাস এর যে নির্মাতা ছিল সেই নির্মাতা যখন সেই কম্পিউটারের ব্যবহারকারীকে নিজে নিজে আনব্লক না করতে ততক্ষণ পর্যন্ত কম্পিউটারগুলোকে অ্যাক্সেস করা যেত না।

যে সমস্ত কম্পিউটারে এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়েছিল সে সমস্ত কম্পিউটারের মালিককে ইমেইল করা হতো অথবা মেসেজ করা হতো এবং সেই মেসেজের মাধ্যমে কিছু পরিমাণ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হতো।

যারা মুক্তি পন দিয়ে দিত শুধুমাত্র তারা তাদের কম্পিউটারকে অ্যাক্সেস করতে পারতো অথবা কেউ সেই কম্পিউটারকে অ্যাক্সেস করতে পারত না।

সহজ করে যদি বলা হয় তাহলে এই ভাইরাসটি মূলত তৈরি করা হয়েছিল মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করে তার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য।

এই ভাইরাসটি যখন কম্পিউটারে প্রবেশ করতো তখন সেই কম্পিউটারের পর্দায় একটি মেসেজ ভেসে উঠত এবং সেই মেসেজটি ছিল একটি অফারের মেসেজ।

কেউ যদি অফার নেওয়ার জন্য সেই মেসেজের উপরে ক্লিক করতো সাথে সাথে তার কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশ করত আর তখন থেকেই তাঁর কোনো ধরনের ফাইল অ্যাক্সেস করা যেত না এবং তখন সমস্ত মানুষ বিপদের মুখে থাকত।

সহজ করে বলা হয় তাহলে এই ক্রিপ্টোলকারের একটিমাত্র উদ্দেশ্য ছিল সেটি হচ্ছে কম্পিউটারের মালিক কে জিম্মি করে তার কাছ থেকে কিছু পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেওয়া।

কেউ যদি মুক্তি পন দিত অথবা জমির জন্য টাকা দিত তার সমস্ত ফাইলগুলোকে ফিরিয়ে দেওয়া হতো কিন্তু যারা টাকা দিত না তাদের ফাইলগুলো কোনোভাবেই ফিরিয়ে দেওয়া হতো না তাদের ফাইল সারা জীবনের জন্য এনক্রিপ্ট করে দেওয়া হত।

তখনকার সময়ে ক্রিপ্টোলকার ভাইরাসটিকে সহজে কম্পিউটার থেকে ডিলিট করে দেয়া যেত কিন্তু সেই ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত যে সমস্ত ফাইলগুলো এনক্রিপ্ট ছিল সেগুলো কোনোভাবেই ফ্রি পাওয়া যেত না।

ধারণা করা হয় ২০১৪ সালে ভাইরাসটি যখন একদম নির্মূল হয়ে যায় তখন অব্দি সর্বমোট ৩ মিলিয়ন ডলারের বেশি টাকা আত্মসাৎ করে ফেলেছিল এই ভাইরাসটির মূল হোতা।

৫টি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম এবং সে ভাইরাসগুলোর ইতিহাস এখানেই শেষ। এখন চলুন ভাইরাস থেকে কিভাবে নিজেকে মুক্ত রাখা যায় সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করি।

ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায়

এখন যদি আপনার কম্পিউটারে হঠাৎ করে ভাইরাসের সংক্রমণ হয় অথবা আপনি চাচ্ছেন আপনার কম্পিউটারকে ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখার তাহলে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন?

দেখুন ভাইরাস যেকোনো কম্পিউটারে প্রবেশ করতে পারে এবং যেকোন কম্পিউটারে প্রবেশ করে সেই কম্পিউটারের মালিকের কাছ থেকে মুক্তিপণ নিতে পারে অথবা সেই কম্পিউটারের সমস্ত ডেটা গুলো কে চুরি করে বিক্রি করে দিতে পারে।

তাহলে চলুন আমরা জেনে নেই কিভাবে আমরা আমাদের কম্পিউটারকে ভাইরাস থেকে দূরে রাখতে পারে এবং ভাইরাসমুক্ত রাখতে পারি।

এন্ট্রি ভাইরাস ব্যবহার করুন

আমরা কমবেশি সবাই এন্টি ভাইরাসের কথা শুনেছি আর যদি আপনার কম্পিউটারে এন্ট্রি ভাইরাস সেটআপ করা থাকে তাহলে সে যেকোন ভাইরাস কে আপনার কম্পিউটারে প্রবেশ করতে বাধা প্রদান করবে।

বর্তমান সময়ে এন্টিভাইরাস গুলো এত বেশি আপডেট করা হয়েছে যে যদি কোন ভাইরাস কম্পিউটারে দেখা দেয় বা সংক্রমণ করার চেষ্টা করে তারা সাথে সাথে সেটিকে ডিটেক্ট করে এবং সেই ডিটেক্ট করার সাথে সাথেই কম্পিউটার থেকে থেকে নিজে নিজেই ডিলিট করে দেয়।

তাই যদি আপনি আপনার কম্পিউটারকে ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখতে চান অথবা ভাইরাস যদি থেকেও থাকে সেগুলো কি ডিলিট করতে চান আপনি অবশ্যই একটি ভালো মানের এন্টিভাইরাস ব্যবহার করবেন।

আপনি কোনোভাবেই ফ্রিতে যে সমস্ত এন্টিভাইরাস পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করতে যাবে না কারণ ফ্রী সমস্ত এন্টিভাইরাস গুলোর মধ্যে লুকিয়ে লুকিয়ে কিছু কিছু হ্যাকার রয়েছে যারা ভাইরাস ঢুকিয়ে দেয়।

তাই আপনাকে টাকা খরচ করে ক্যাসপারস্কাই, nod32, এভাস্ট এই ধরনের সমস্ত এন্টিভাইরাস রয়েছে সেগুলো কিনে নিতে হবে।

আপনি বাংলাদেশের কম্পিউটার সোর্স থেকে অথবা আপনি দারাজ এর মত ওয়েব সাইট থেকে খুব সহজে এন্টিভাইরাসের সিডি কিনে নিতে পারবেন।

অপারেটিং সিস্টেম পরিবর্তন

আপনি যদি মনে করেন যে আপনার ভাইরাস দ্বারা কম্পিউটারটির সংক্রমিত হয়েছে তাহলে আপনি খুব সহজেই যে কাজটি করতে পারবেন সেটি হচ্ছে আপনার পেনড্রাইভ অথবা সিডি ড্রাইভ ব্যবহার করে আপনার যে পুরাতন অপারেটিং সিস্টেমটি রয়েছে সেটিকে রিমুভ করে নতুন করে অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করতে।

বিশেষ করে আমরা যেটাকে উইন্ডোজ বলে থাকি এই উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমকে আপনার কম্পিউটার থেকে যখন ডিলিট করে দিবেন এবং নতুন আরেকটি অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করবেন তখন আপনার কম্পিউটারে থাকা সমস্ত ভাইরাসগুলো নিজে নিজেই ডিলিট হয়ে যাবে।

ইন্টারনেট থেকে অপরিচিত ফাইল ডাউনলোড

আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা অনলাইনে মুভি দেখতে পছন্দ করেন বা অনলাইন থেকে ফ্রি সফটওয়্যারগুলো ডাউনলোড করার চেষ্টা করেন।

এমন যদি করে থাকেন তাহলে আপনাকে এটি বাদ দিয়ে দিতে হবে কারণ অনলাইন থেকে ফ্রিতে সফটওয়্যার ডাউনলোড করে সেগুলো যদি সেটআপ করেন আপনার কম্পিউটারে ভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।

তাছাড়া অনেক সময় ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে করতে কিছু কিছু সফটওয়্যার রয়েছে বা ফাইল রয়েছে যেগুলো অটোমেটিক ডাউনলোড হয় সেগুলো ডাউনলোড হওয়ার সাথে সাথে আপনার কম্পিউটারে সেটআপ করা যাবে না সেগুলো কে ডিলিট করে দিতে হবে।

এছাড়াও আপনি আপনার কম্পিউটারকে কিভাবে ভাইরাস মুক্ত রাখবেন সম্পূর্ণ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে সেগুলো আপনারা চাইলে এই লিংকে ক্লিক করে দেখে নিতে পারেন।

শেষ কথা

এই ছিল ৫টি কম্পিউটার ভাইরাসের নামএবং কিভাবে ভাইরাস থেকে নিজের কম্পিউটারকে সুরক্ষিত করা যায় তার একটি বেসিক ধারণা।

আশা করছে আর্টিকেলটি আপনার অনেক ভালো লেগেছে এবং সেইসাথে কেমন লেগেছে সেই মন্তব্যটি অবশ্যই কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন।

এই ধরনের তথ্য পেতে প্রতিনিয়ত আমাদের ওয়েবসাইট ব্রাউজ করুন কারণ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়ত ও টেকনোলজি রিলেটেড বিভিন্ন ধরনের পোস্ট আপডেট করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *